ডিজিটাল ডিভাইড

জালের ন্যায় পরস্পর সর্ম্পকযুক্ত থাকা গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলোকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ৫৫ হাজার ৫৯৮বর্গ মাইলের এই দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। যার ৭৬ ভাগ মানুষ বাস করে গ্রামে। বাকী ২৪ ভাগ মানুষ  বাস করে শহরে। যারা শহরে বাস করে তারা উন্নত নাগরিক সুবিধা ভোগ করে আর গ্রামের মানুষ সর্বদা সেই সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শহুরে মানুষ গুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত ছোঁয়া পেয়ে অভ্যস্ত অন্যদিকে গ্রামের সাধারন মানুষ গুলো দেখাতো দুরের কথা সে প্রযুক্তি গুলির নাম ও শুনেনি। বর্তমান ডিজিটাল ডিভাইডের কারনে গ্রাম ও শহর দুইটি আলাদা সত্তা হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু একটি কথা পরিষ্কার আর তা হলো গ্রামকে বাদ দিয়ে একটি দেশের দারিদ্র বিমোচন তথা উন্ন্য়ন সম্ভব নয়।গ্রাম এবং শহর, ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে এই যে বৈষম্য এর হাত থেকে মুক্তির একটিই পথ আর তা হলো সর্বদা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যাপক ব্যবহার এবং সফল প্রয়োগ।
বর্তমানে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে আইসিটি শুধু আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাজে লাগে। এই ধারনার সাথে আমি একমত নই কারন আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র হচ্ছে শহর। অন্যদিকে ৭৬ শতাংশ কৃষিজীবি মানুষ বাস করে গ্রামে, গ্রামের এই দ্ররিদ্র কৃষক, জেলে, কামার-কুমারের ভাগ্যের উন্নয়ন না ঘটাতে পারলে দেশের দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব নয়। ত্য ও যোগাযোগের অবাবে আমাদের মতো দেশে প্রায় দেখা যায়, কোন অঞ্চলে কাঁচামাল রয়েছে, কি ধরনের বিনিয়োগ পরিবেশ, বাজারে কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি। যদি আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা যায় তাহলে একজন বিনিয়োগকারী সবগুলো তথ্য যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। প্রান্তিক কৃষকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কবলে পড়বে না ফলে কৃষকরা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী লাভবান হতে পারবে। ফলশ্র“তিতে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে গ্রামীন জনগোষ্টীর দারিদ্যের বোঝা লাঘব হবে। কৃষি খাতের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং খাদ্য ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে ই-সেবা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। যা উৎপন্ন কৃষি পন্যের বাজার দর সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের অবহিত করার লক্ষে ওয়েবসাইট চালু হলেও তথ্য ও প্রযুক্তিগত পয়োজনীয় অবকাঠোমো ও ওয়েবসাইট থেকে তথ্য আহরণ বিষয়ক প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে কৃষকরা তাদের উদ্দেশ্য পরিচালিত এই ওয়েব সাইট হতে কোন তথ্য পাওয়া হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই দারিদ্র বিমোচন তথা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

দারিদ্রতার কারণ
উন্নয়নশীল বাংলাদেশে প্রায় ৪০% মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। দারিদ্র সমস্যার অনেক গুলি কারণ রয়েছে তার মধ্যে নিম্নলিখিত কারনগুলি অন্যতম।
১. সম্পদ ও সুযোগ সুবিধার অসম বন্টন।
২.অসম ও বিকৃত বাজার ব্যবস্থা।
৩. পরিবেশ দূষণ ও তার ক্ষয়।
৪. জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকাশ না হওয়া।
৫. অশিক্ষা ও অন্ধ শিক্ষা।
৬. অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ অদক্ষতা বা অনীহা।
৭. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা।
৮. প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব।
৯.প্রাকৃতিক দূর্যোগ ইত্যাদি।
উপরোক্ত কারনগুলির ফলে দরিদ্রের সৃষ্টি হচ্ছে ফলে সমাজে দেখা দিচ্ছে ধনী ও দরিদ্র দুইটি শ্রেণি। আর এই শ্রেণি বৈষম্যের ফলে কেউ আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে আর কেউ সুযোগ পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইসিটি দিয়ে উন্নয়ন আনয়নে দক্ষ কম্পিউটার প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ তৈরির বিকল্প নেই।
ওর্য়াল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটির জেনেভা ঘোষণা পত্র 
ওর্য়াল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি জেনেভা ঘোষণা পত্র আইসিটিকে দারিদ্য বিমোচনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণ পত্রের মূলনীতেতে নিম্নলিখিত ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে।
১.আইসিটিঅবকাটামো গড়ে তোলা।
২. সবার জন্য তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
৩. দক্ষতা বৃদ্ধি।
৪. সহায়ক পরিবেশ তৈরি।
৫. জীবনের সকল ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৬. সকল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রেখে মাতৃভাষায় আইসিটি ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৭. মত প্রকাশ এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৮. ত্যথ সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

No comments

ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ

ব্যাপ্তি বা ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ হলো : Personal Area Network (PAN) PAN এমন এক ধরনের কম্পিউটার নেটওয়...

Powered by Blogger.