বিশ্বগ্রাম (Global Village)
বিশ্বগ্রাম এর প্রবর্তক মার্শাল ম্যাকলুহ্যান (জুলাই ২১, ১৯১১ – ডিসেম্বর ৩১, ১৯৮০)। কানাডিয়ান দার্শনিক হার্ভার্ট মার্শাল ম্যাকলুহ্যান যোগাযোগ তত্বের জনক। তিনি সর্বগ্রথম তাঁর রচিত The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man (১৯৬২) বইয়ে বিশ্বগ্রামের ধারনা দেন। অতঃপর ১৯৬৪ সালে Understanding Media গ্রন্থে বিশ্বগ্রাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামের ধারণা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই শব্দগুলো ব্যবহার করে আসছি সবাই। তবে সত্যিকারের গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম বোঁধহয় বলা যায় ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতটাকেই। দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত এখন বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ।
যেকোনো সময় সর্বশেষ খবরের জন্য রয়েছে অনলাইন পত্রিকা, খবর ছড়িয়ে দিতে রয়েছে ফেসবুক, টুইটার। যেকোনো তথ্যের জন্য রয়েছে গুগল। কেনাকাটা করতেও ই-কমার্সে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাপী মানুষেরা। শিক্ষার জন্যও রয়েছে ইন্টারনেট, স্বা্েযর জন্যও রয়েছে ইন্টারনেট। সব মিলিয়ে ইন্টারনেট এখন জীবনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোর কল্যাণে গোটা বিশ্ব এখন অনেক বেশি কাছাকাছি চলে এসেছে। ফেসবুক, টুইটার, ফ্লিকার, ইন্সটাগ্রাম, পিনটারেস্ট, টাম্বলার, সাউন্ড ক্লাউড আর ইউটিউবের কল্যাণে গোটা বিশ্ব এখন পরিণত হয়েছে শেয়ারিংয়ের স্থানে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এসব সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এবং সার্ভিস পেয়েছে অসামান্য জনপ্রিয়তা।
বর্তমান সময়কে বলা হয়ে থাকে ‘বিশ্বায়নের সময়’। অত্যন্ত জোর দিয়েই বলা হচ্ছে, এ যুগ হলো দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলার ‘বিশ্বায়নের যুগ’। আত্মতৃপ্তি সহকারে ঘোষণা করা হচ্ছে, সারা বিশ্ব এখন আমার-আপনার ঘরের মধ্যে। দুনিয়া হলো এক বিশ্বগ্রাম। ‘বিশ্বায়ন’ শব্দটির গভীরতা ও ব্যাপকতা অপরিসীম। গন্ডি-বদ্ধতা-সীমাবদ্ধতা-সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করার মধ্য দিয়েই তো ঘটে সমাজের অগ্রগতি। ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে; দেখবো এবার জগৎটাকে/কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে’- ছত্রটি শুধু কবির কল্পনা নয়। এ হলো মানুষের এগিয়ে চলার সহজাত আকাক্সক্ষা। একথা কেউই অস্বীকার করবে না যে, সংকীর্ণতার বিপ্রতীপে কমিউনিস্ট পার্টিই প্রথম আন্তর্জাতিকতার মতাদর্শ বিশ্বজনতার প্রাঙ্গণে তত্ত্বে এবং প্রয়োগে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিকে এঙ্গেলস রচিত ‘কমিউনিস্ট ইস্তাহার’ যে বাক্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছিল তা হলো- ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। এর চেয়ে বড় ও ব্যাপক বিশ্বায়নের বার্তা আর কি হতে পারে? কার্যত রাজনৈতিক স্তরে এটাই ছিল প্রথম নতুন যুগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বায়নের বার্তা।
মার্কিন লেখক এলভিন টফলারের (১৯৮১) ‘তৃতীয় জোয়ার’ বা তথ্যনির্ভর সমাজব্যবস্থায় আমাদের বসবাস। তিনি বলেছেন, সভ্যতাগুলোর তিনটি প্রধান জোয়ার বা বৈশিষ্ট্য আছে। কৃষিকাজ ছিল সভ্যতার প্রথম জোয়ার, আর দ্বিতীয় জোয়ার গড়ে ওঠে শিল্পায়নের মাধ্যমে। টফলারের মতে, এই দুই জোয়ার ম্লান হয়ে আসছে এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ গতিপথ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তৃতীয় জোয়ারের কারণে। এই তৃতীয় জোয়ার হলো ইলেকট্রনিক সভ্যতা বা তথ্য যুগ, যেটি পরিপূর্ণতা পেয়েছে ইন্টারনেটের বদৌলতে। কানাডীয় চিন্তাবিদ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মার্শাল ম্যাকলুহান (১৯৬৪) যে ‘গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম’ ধারণার কথা বলেছিলেন তার মূলনায়ক এখন ইন্টারনেট। আধুনিক সমাজে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ পর্যন্ত সবকিছু যে তথ্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় শক্তি এখন ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে অনলাইন গণমাধ্যমের সুবৃহৎ পরিসর। সময়, স্থান ইত্যাদির চিরাচরিত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তাৎক্ষণিকতার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত নির্মিত কিংবা বিনির্মিত হচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যমের দর্শন।
প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশিত হওয়ায় অনলাইন গণমাধ্যমের সীমারেখা নির্ধারণ করা গণমাধ্যম চিন্তকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। সনাতন গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধারণ করেই প্রকৃতঅর্থে অনলাইন গণমাধ্যম তার পরিসর নির্মাণ করেছে। এ কারণে কোনো কোনো গণমাধ্যম-পণ্ডিত নয়া প্রযুক্তিনির্ভর এ মাধ্যমটিকে ‘ম্যাস মাল্টিমিডিয়া’ (McAdams, 2005) হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অর্থাৎ সংবাদপত্রের টেক্সট, ছবি কিংবা রেডিও’র শব্দ এবং টেলিভিশনের ভিডিও চিত্র সবকিছুই একইসাথে পাওয়া যাচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যমে। আরো স্পষ্ট করে বললে, কোনো একটি সংবাদ সাইট থেকে অডিয়েন্স নির্দিষ্ট একটি সংবাদ যেমন পাঠ করতে পারেন একই সাথে পডকাস্টিং সুবিধার কারণে সেই সংক্রান্ত খবর শুনতে এবং ব্রডকাস্টিংয়ের মাধ্যমে তার ভিডিও ফুটেজ দেখতে পারেন। একটি মাধ্যমে সনাতন গণমাধ্যমগুলোর এমন সংমিশ্রণ সম্ভব করে তুলেছে অনলাইন প্রযুক্তি। এ যেন জন মিল্টন থেকে লক কিংবা ম্যাডিসন থেকে স্টুয়ার্ট মিলের বাক-স্বাধীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্বগ্রামের উপাদান অনেকগুলো, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-- যোগাযোগ
- কর্মসংস্থান
- শিক্ষা
- চিকিৎসা
- গবেষণা
- অফিস
- বাসস্থান
- ব্যবসা-বানিজ্য
- সংবাদ
- বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ
- সাংস্কৃতিক বিনিময়
এছাড়াও আরো অনেক উপাদান রয়েছে বিশ্বগ্রামে। নিম্নে উপাদান সমূহের কিছু বর্ণনা দেয়া হলো-
যোগাযোগঃ বিশ্বগ্রামে যোগাযোগ হলো এর প্রধান উপাদান। যোগাযোগ মানে তথ্য আদান প্রদানের উপায়। মানুষ থেকে মানুষ বা যন্ত্র থেকে যন্ত্রে তথ্য আদান প্রদান হতে পারে। মাধ্যম-ও হতে পারে শব্দ, বিদ্যুৎ, তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ (আলো বা রেডিও-ওয়েভ)।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশ-মহাদেশ, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে যোগাযোগ এতোটাই সহজ হয়েছে যে, মানুষে মানুষে যোগাযোগ করার জন্য এখন সু-দূর দেশে পারি দিতে হয় না। কেবল মাত্র একটি ফোন ডায়াল বা নেট ডায়ালের মাধ্যমেই সম্ভব হয় মূহুর্তের মধ্যেই।
যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষকে নিজ ভুবনকেন্দ্রিক ভাবনার তাড়না যোগাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে একটা সন্দেহ-সংশয় বিশেষজ্ঞদের বেশ কিছুদিন যাবতই ছিল। আর সম্প্রতি এই সন্দেহের যথেষ্ট ভিত্তি আছে বলে জানান দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি অনুসারে, একটা মানুষ কতখানি আত্মকেন্দ্রিক সেটা তার ফেসবুকের বন্ধু সংখ্যা এবং এর অন্যান্য ব্যবহার দেখে অনুমান করা সম্ভব। শুধু তাই না, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে গ্রীক দেবতা নার্সিসাস আবার নতুনভাবে ফিরে আসছেন বলে বলেও মন্তব্য করেছেন ওয়েস্টার্ন ইলিনিয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকরা।
কর্মসংস্থানঃ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষত ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো গণমাধ্যমের খবর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। তেমনি আমরাও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানের খবর পাচ্ছি। বিভিন্ন দেশ-মহাদেশের কর্মসংস্থানের সকল খবরাখবর পেয়ে যাই। অজ্ঞানতা, কু-সংস্কার, দূর করে মানুষের জীবনে সচেতনতা বৃদ্ধি করে শিক্ষা। তাই শিক্ষাই জীবনের আলোক ধারা হিসাবে বিবেচিত। প্রতি বৎসর ক্রমাগত পাসের হার বাড়ছে। এটি অবশ্যই ভাল দিক। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মান বাড়ছে কিনা সেটিও একটি প্রশ্ন হয়ে আছে। কেবল পাসের হার বাড়ছে ভাল কলেজে সুযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষা জীবন শেষে ভাল চাকরির খোঁজ মিলছে না। শিক্ষিত যুবক বেকার কেন? কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব হয়তো বেকার। অনেকে আবার বি.এস.সি./বি. কম. পাস করে অফিসিয়াল চাকরি না পাওয়াতে বেকার বসে আছে এটা তার জীবনের দুর্বলতা। বাড়ছে জনসংখ্যা বাড়ছে শিক্ষার হার সেই পরিমাণ বাড়ছে না কর্মসংস্থান। তাই শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগ্যতা ভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা খুব বেশি জরুরি। দেশে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের লোকের আর্থিক আয় বৃদ্ধি আয় এবং দেশ সমৃদ্ধি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে। তাই শিক্ষিত লোক বেকার না রেখে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে। শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার একান্ত জরুরি, যা বিশ্বগ্রাম চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করতে পারে।
শিক্ষাঃ ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রতিশব্দ হলো Education. Education শব্দের সাধারণ আভিধানিক অর্থ হলো : শিক্ষাদান ও প্রতিপালন, শিক্ষাদান, শিক্ষ। Educate মানে : to bring up and instruct, to teach, to train অর্থাৎ প্রতিপালন করা ও শিক্ষিত করিয়া তোলা, শিক্ষা দেওয়া, অভ্যাস করানো।
বিজ্ঞানের ক্রম-অগ্রগতির এ সময়টিকে বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির যুগ হিসেবে। বর্তমানে সামরিক বা পারমাণবিক শক্তি নয় তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা দ্বারাই নির্ধারিত হচ্ছে দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা। এক সময়ের সামরিক স্বার্থ ও অস্ত্র গবেষণার সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি এখন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ড্রইং রুম বা বাসগৃহে প্রবেশ করেছে। রচলিত ধারায় শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে একটি কঠিন ও নিরস বিষয়। এ ধারায় পাঠ্যপুস্তকের বিষয়সমূহ শিক্ষকগণ শ্রেণীকক্ষে যেভাবে উপস্থাপন করেন তাতে শিক্ষার্থীরা পঠিত বিষয়ের প্রতি কিছুতেই আগ্রহী হয়ে উঠছে না। শিক্ষা-বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা যাচ্ছে না এবং বিষয়বস্তু ঠিক মতো বোধগম্যও হচ্ছে না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পঠিত বিষয়কে না বুঝেই আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে। ফলে প্রকৃত শিখনফল অর্জিত হচ্ছে না। পরীক্ষায় ফল ভালো করলেও কর্মজীবনে গিয়ে অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজিত এই সমস্যাকে দূর করার লক্ষ্যে ডিজি অর্থাৎ ডিজিটাল ক্লাসরুম একটি শুভ সূচনা। এতে শিক্ষা বিষয়টিকে শিক্ষার্থীর নিকট অনেক বেশি আনন্দময়, সহজবোধ্য করা যাবে। শিক্ষা হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক।
শিক্ষার মানোন্নয়নে ‘শিক্ষকদের দ্বারা ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি’ আরেকটি উল্লেখ করার মতো বিষয়। ডিজিটাল কনটেন্ট হলো পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত বিষয়কে শব্দে, ছবিতে ও গতিময়তায় উপস্থাপনের জন্য নির্মিত শিক্ষকদের তৈরি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ। শিক্ষকগণ আগে থেকেই কম্পিউটারে পাওয়ার পয়েন্ট প্রোগ্রামে বিভিন্ন ভিডিও, অডিও, ইফেক্ট, এনিমেশন ব্যবহার করে পাঠ্যপুস্তকের কনটেন্টকে সøাইডে রূপান্তরিত করবেন। পরে শ্রেণীকক্ষে সেটি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করবেন। এতে পাঠ্যপুস্তকের কালো অক্ষরে বর্ণিত ঘটনা বা বিষয় শিক্ষার্থীর কাছে শব্দে, চিত্রে, গতিময়তা, ভিডিও এবং এনিমেশনের মাধ্যমে সহজেই জীবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতে পারে। কনটেন্ট তৈরির জন্য এক জন শিক্ষকের কম্পিউটারের সাধারণ জ্ঞান, ইন্টারনেট থেকে ছবি, এনিমেশন বা ভিডিও ডাউনলোড করার কৌশল, তা পাওয়ারপয়েন্টে অন্তর্ভুক্ত করার দক্ষতা থাকলেই চলবে। শিক্ষকদের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট একটি বিশেষ ওয়েব সাইট এবং জাতীয় ই-তথ্যকোষে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকগণ এ সব সাইট থেকে ডিজিটাল কনটেন্ট সংগ্রহ করে এমনকি প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পাদনা করে শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারবেন। চাইলে শিক্ষার্থীরাও সেখান থেকে সাহায্য নিতে পারবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত, ব্যাকরণ এবং ইংরেজির মতো কঠিন বিষয়গুলো এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের নিকট আরও বোধগম্য এবং সহজ করে উপস্থাপন করা যায়।
চিকিৎসাঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে চিকিৎসা শাস্র হয়ে গেছে এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান। চিকিৎসা বিজ্ঞান বা চিকিৎসা শাস্ত্র হল রোগ উপশমের বিজ্ঞান কলা বা শৈলী। মানব শরীর এবং মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিষেধক বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যায়ন করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সমসাময়িক চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন, গৱেষণা, এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার করে লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে ঔষধ বা শল্য চিকিৎসার দ্বারা রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করা হয়।ঔষধ বা শল্য চিকিৎসা ছাড়াও মনোচিকিৎসা (psychotherapy), কৃত্রিম অঙ্গ সংস্থাপন, আনবিক রশ্মির প্রয়োগ, বিভিন্ন বাহ্যিক উপায় (যেমন, স্প্লিণ্ট (Splint) এবং ট্রাকশন),জৈবিক সামগ্রি (রক্ত, অণু জীব ইত্যাদি), শক্তি্র অন্যান্য উৎস (বিদ্যুৎ, চুম্বক, অতি-শব্দ ইত্যাদি) ইত্যাদিরও প্রয়োগ করা হয়।
অধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশ্বগ্রামের ভুমিকা অনেক। ঘরে বসে নিন অনলাইন চিকিৎসা সেবা প্রধান করছে বিভিন্ন ডাক্তারগণ। দেশ থেকে বিদেশে আবার বিদেশ থেকে দেশে আবার দেশ থেকে দেশে এ সেবা প্রদান করা হয়। এতে বিশ্বগ্রামের ভূমিকাই পুরোটা।
গবেষণাঃ গবেষণা (ইংরেজি: Research) হল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বিজ্ঞানীদের কার্যাবলী। যিনি গবেষণা করেন বা গবেষণা কর্মের সাথে জড়িত, তিনি গবেষক বা গবেষণাকারী নামে পরিচিত।
গবেষণা সাধারণত বালিঘড়ি মডেল-কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এই মডেল-কাঠামো অনুসারে গবেষণা শুরু হয় একটি বিস্তৃত কাঠামোকে কেন্দ্র করে যেখানে নির্দিষ্ট প্রজেক্ট বা উদ্দেশ্যের আওতায় প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ, ফলাফল উপস্থাপন এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা সন্নিবেশিত করা হয়। গবেষণার প্রধান ধাপসমূহ হচ্ছে:
- গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ
- প্রাসঙ্গিক গবেষণা ও তথ্য পর্যালোচনা
- গবেষণার সমস্যা নির্দিষ্টকরণ
- অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও গবেষণার প্রশ্ন নির্দিষ্টকরণ
- তথ্য সংগ্রহ
- তথ্য বিশ্লেষণ ও বর্ণনাকরণ
- প্রতিবেদন তৈরি
গবেষণার প্রতিটি ধাপেই তথ্য ও যোগাযোগ পদ্ভতির ব্যবহার করা উচিৎ। নচেৎ গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
অফিসঃ অফিস ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে পূর্বের সকল রেকর্ড ছাডিয়ে গেছে। বর্তমান অফিস ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেনন্দিন কাজকে আরো সহজ-সরল ও সাবলীল করে তুলেছে। বিশ্বগ্রামের ধারণা অফিস ব্যবস্থাকে করেছে আরো সমৃদ্ধ ও দক্ষ কার্য পরিধির ধারা।
বর্তমান অফিস ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু শব্দ, এর মধ্যে ই-গভর্নেন্স অন্যতম। ই-গভর্ণনেন্সের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, রাষ্ট্রীয় পরিচালনাধীন অফিস ও স্বায়ত্বশাসিত অফিস সমূহ।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়েনর ফলে আমরা পেয়েছি সহজ ও বোধগম্যতা সম্পন্ন অফিস ব্যবস্থাপনা।
বাসস্থানঃ ব্রিটেনের ৪৩ শতাংশ মানুষ বাসস্থান সঙ্কটে ভুগছে। আর ধীরে ধীরে এ হার বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ফুটপাথে মানুষের বসবাস। গত ২০১১ সালের ডিসেম্বরে গৃহহীন মানুষের হার ছিল ১৮ শতাংশ।সম্প্রতি বিভিন্ন সংস্থার জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।ব্রিটেনের অসংখ্য মানুষ প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও রাস্তার পাশে ফুটপাথে আশ্রয় নেয়। সাম্প্রতিক জরিপে এ সংখ্যা ছয় হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।ইরানের আরবি ভাষার নিউজ চ্যানেল আল আলমের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাব্বির রাজাভি বলেন, “ব্রিটেনের রাস্তাঘাটে এত বিশাল সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়, দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা কথা ও কাজে ন্যায়পরায়ণ নয়।”
বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাসস্তানকে করে তুলেছে অত্যাধুনিক স্বর্গবাসযোগ্য। যদি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বাসস্থানকে সমৃদ্ধ করা যায়, তাহলে বিষয়টি কতইনা অধুনিক হয়! তথ্য ও যোগাযোগ প্রযু্ক্তির মাধ্যমে বাসস্থানের ব্যবস্থা বলতে, বাসস্থানকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর করা।
ব্যবসা বানিজ্যঃদিন দিন প্রযুক্তি সহজতর করেছে জীবনের প্রতিটি কাজ। বিনোদন থেকে শুরু করে দাপ্রিক কোনো কাজই আর প্রযুক্তির বাইরে নয়। একই ভাবে বেশ কিছুদিন আগেই আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছে এই আধুনিক মাধ্যমটি। ফলে দিন দিন বাড়ছে ই-বাণিজ্যের প্রসার। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কিছু ই-বাণিজ্য ওয়েবসাইট গড়ে উঠেছে। ই-বাণিজ্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি করা সম্ভব তেমনি একই সাথে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও যুক্ত হয়েছে অমিত সম্ভাবনা আর সমৃদ্ধির সুযোগ।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আপডেট তথ্য ভিক্তিক ওয়েব পোটাল এড্রেস বাজার ডট কম্। তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষের জীবন যাত্রার গতি আরো বাড়িয়ে দিতে এই ওয়েব পোর্টালে রয়েছে শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে ব্যবসা-বানিজ্যের তথ্য। এখান হতে নিজস্ব সার্চ ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্টানকে এক নিমিষেই খুজে পাওয়া যাবে।
ইলেকট্রনিক কমার্স কে সংক্ষেপে ই-কমার্স বলা হয়। এটি একটি আধুনিক ব্যবসা পদ্ধতি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ ব্যবসা এবং লেনদেন পরিচালিত হয়ে থাকে। বস্তুত ইলেকট্রনিক কমার্স হচ্ছে ডিজিটাল ডাটা প্রসেসিং এবং ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সংক্রান্ত আদান প্রদান। সাধারণত এ কাজটি সম্পাদন করা হয় সবার জন্য উন্মুক্ত একটি নেটওয়ার্ক তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তাই বলা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সংক্রান্ত আদান প্রদান বা লেনদেন করার প্রক্রিয়াই হলো ই-কমার্স।
সংবাদঃ শতাব্দী ধরে মানুষের কাছে সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করার জন্য ছাপার মাধ্যম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সবচেয়ে প্রাচীন সংবাদপত্র হলো, রোমের ‘অ্যাক্টা দিউরনা’ (Acta Diurna), প্রকাশিত হয় ৫৯ খ্রীস্ট-পূর্বাব্দে। জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলী অবহিত করার জন্যে জুলিয়াস সিজার প্রধান শহরগুলোতে সংবাদ প্রেরণের ব্যবস্থা করতে চাইলেন। বিশাল সাদা বোর্ডের এই ‘অ্যাক্টা’ সরকারের স্ক্যানডালস, মিলিটারি ক্যামপেইন কিংবা বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের সংবাদ লিখে প্রদর্শনের জন্য রাখা হতো বাথের মতো জনবহুল শহরগুলোতে। সর্বপ্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় অষ্টম শতাব্দীর চীনে। হাতের লেখা সংবাদ-সম্বলিত কাগজ বিলি করা হতো বেইজিংয়ে ।
১৪৪৭ সালে জোহান গুটেনবার্গ ছাপাখানা আবিষ্কার করলে শুরু হয় সংবাদপত্রের আধুনিক যুগ। গুটেনবার্গের এই যন্ত্র, চিন্তার অবাধ আদান-প্রদান ও জ্ঞান বিস্তৃতিতে ভূমিকা রাখে যার ফলে ইউরোপীয় রেনেসাঁর বিষয়বস্তু সংজ্ঞায়িত করা সহজ হয়। এই সময়ে, নিউজলেটারগুলো উঠতি বণিকদেরকে ব্যবসার বিষয়সংক্রান্ত সংবাদ প্রদান করতো। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে জার্মানের শহরগুলোতে সার্কুলেশন হতো ম্যানুসক্রিপ্ট নিউজশিটস্। এই প্যামফ্লেট বা সংবাদপুস্তিকা ছিলো দারুণ স্পর্শকাতরতায় পরিপূর্ণ। একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিলো যে, জার্মানারা ট্র্যানসিলভ্যানিয়াতে ভ্লাদ সেপেড্রাকুলের ( Vlad TsepesDrakul) হাতে নিগৃহীত হচ্ছে যা কাউন্ট ড্রাকুলা হিসেবেও পরিচিত ছিলো। ১৫৫৬ সালে ভেনিস সরকার প্রকাশ করে ‘নোটিজি স্ক্রিটে’ ( Notizie Scritte) এর জন্য পাঠকদের মূল্য প্রদান করতে হতো ছোট একটি সিকি বা ‘গেজেট’ (gazetta)।
বর্তমানে! বর্তমানের সংবাদ ও সংবাদপত্র!! অনেক সহজলভ্য ও আধুনিক। আজকে, রেডিও, টেলিভিশন, ও ইন্টারনেটের যুগেও প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কাগজের পাতায় ছাপার অক্ষরে চিরস্থায়ী লেখাগুলোই হয়ে থাকবে, কালের সমুজ্জ্বল সাক্ষী।
Post a Comment