ই-গর্ভনেস

একটি দেশের সরকার সে দেশের জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ােন সদা সচেষ্ট। কিন্তু জনগনের সাথে সরাসরি ইন্টারএ্যাকশান না তাকার ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। যদি গ্রাম ও শহর অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় তাহলে তা দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। সরকারের কাজের গতি বাড়াবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পাবে। অবাধ তথ্য প্রবাহ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে। আর এই কাজটি তখনই সম্ভব হবে যখন ই-গর্ভনেস বা ইলেকট্রনিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত হবে।

ভারতের অন্ধ প্রদেশের মূথ্যমন্ত্রী (ল্যাপটপ মিনিষ্টার) চন্দ্রবাবু নাইডু ই-গর্ভানেস বা ইলেকট্রনিক সরকার ব্যবস্থা কে  (ঝরসঢ়ষব, গড়ৎধষ, অপপড়ঁহঃধনষব, জবংঢ়ড়হংরাব ধহফ ঞৎধংঢ়ধৎবহঃ) সরকার ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, কিচু দরর্দশী রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বির্ণর এক ধরনের সহজ, নৈতিকতাপূর্ণ জবাবদিহিতাপূর্ণ, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ সরকার ব্যবস্থায় হচ্ছে ই-গর্ভামেন্ট বা ইলেকট্রনিক সরকার। ই-র্গভমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে দেশের জনগন এবং সরকার যে সুবিধা গুলো প্রাপ্ত হবে তা নিম্নরূপ:
অনলাইনে সরকারের সমস্ত নীতিমালা, গেজেট, প্রস্তাবিত নীতিমালা বা আইনের খসড়া, পরিকল্পনা, বাজেট প্রভৃৃতি সাধারন জনসাধারনের জন্য উম্মক্ত করে দিলে প্রয়োজনে দেশের নাগরিকরা তাদের মতামত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিকট জানাতে পারবে। ফলে সরকারে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত  করা সম্ভবহলে আমলাতন্ত্র মুক্ত দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে। কারন কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষপ্রশিক্ষিত জনবলের কারনে প্রশাসন হয়ে উঠবে গতিশীল চাওয়া মাত্রই যে কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে ফলে লাল ফিতার দৌরত্মা কমে যাবে। অনলাইনে টেন্ডার, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি প্রকাশ করার ফলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমে যাবে। সব কিছু যেহেতু অটোমেশনের মাধ্যমে হতে সেহেতু দূর্নীতি অনেকটা কমে যাবে।
ই-পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হলে প্রতিটি পুলিশ ষ্টেশনকে একটি সমন্বিত নেটওর্য়াকের আওতায় আনতে পারলে দেশের প্রতিদিনের আইন শৃংখলা মনিটরিং করা সহজ হবে। জিডি ও এজহার এন্ট্রি, মামলা নিম্পত্তির ব্যাপারে কম্পিউটারে রের্কড থাকার ফলে আদালত যে কোন সময় মামলা সংক্রান্ত ত্যথাদি প্রাপ্ত হবেন যার ফলে মামলা গুলোর দ্রুত নিস্পত্তি করা সহজ হবে। অন্যদিকে মামলার ফাইল হারানো ভয় থাকবে না। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মামলায় যেহেতু ভুমি সংক্রান্ত সেহেতু ভুমি প্রশাসনে কম্পিউটারায়নে দূর্নীতি অনেক হ্রাস পাবে। অন্যদিকে নাগরিক সেবা প্রাপ্তি সহজতর হবে। ই-হেলথ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে দেশের নাগরিক অতি দ্রুত এবং গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট থেকে চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন। ই-লানিং বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে যে কেউ ঘরে বসেই ডিগ্রী অর্জন করতে পারবে।
ই-কর্মাস ও এম কমার্সের মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রাদী এর মাধ্যমে ক্রয় করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হবে। প্রতারিত ক্রেতা কেউ কনজিউমার রাইটসের আওতায় সাজা দেয়া সম্ভব হবে। অনলাইন ব্যাংকি এর মাধ্যামে ২৪ঘন্টায় নাগরিক সেবা পেতে পারে। এছাড়া সরকারী সব ধরনের কর, বিল, ইউটিলিটি বিল প্রভৃতি পরিশোধের ব্যবস্থা থাকবে। ন্যাশনাল ডাটাবেজ তৈরি করা সম্ভব হলে প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত প্রোফাইল ও মানব উন্নয়ন সূচকসমূহ স্থান পাবে। ফলে এ ডাটাবেজ একই সাথে নাগরিক পরিচয় পত্র সনাক্তকরনের মাধ্যম ও জাতীয় মানব সম্পদ সংক্রান্ত তথ্যের উৎস হিসাবে কাজ করবে।  যে কোন নাগরিক অন লাইনে মতামত করতে পারবে।
এছাড়া একজন নাগরিক খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম মৃত্যু রেজিষ্ট্রশন করণ, পাসর্পোট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন, সরকারী ফর্ম সংক্রান্ত ত্যথাদী পুরন এবং বিভিন্ন তথ্য খুব সহজেই প্রাপ্ত হবেন। ইলেকট্রনিক শাসন ব্যবস্থা প্রর্বতনে আশাবাদী ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম বলেন-‘‘আমি এমন একটি নির্বাচনী দৃশ্যপঠ কল্পনা করছি’’ যেখানে একটি নির্দিষ্ট আসন থেকে একজন প্রার্থী তার মনোনয়ন ফাইল করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা জাতীয় নাগরিক আইডি ডেটাবেজ থেকে প্রার্থীর যাবতীয় ত্যত যাচাই করে নেবেন। এ তথ্য নেটওর্য়াক প্রয়োজনীয় সব খাত থেকেই তথ্যের প্রবাহ অবারিত থাকবে।
যেমন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা তথ্য আসবে বিশ্ববিদ্যালয় বা সংশ্লিষ্ট থেকে। তার কর্মস্থলের রের্কড আসবে তিনি যেখানে কাজ করতেন সেখান থেকে। আয়কর ও অন্যান্য সূত্র যোগান দিবে তার সহায় সম্পদের বৃত্তান্ত। তার ঋণের ইতিহাসের নাড়ি নক্ষত্রের চিত্র তুলে ধরবে ব্যাংকের মতো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পুলিশের রের্কড থেকে আসবে তার নাগরিক সচেতনতা ও আচরণের ফিরিস্তি। তার ইনগত সংশ্লিষ্টতা সরবরাহ করবে বিচার বিভাগ। একজন প্রার্থীর এতসব রকমের কম্পিউটার টার্মিনালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছাবে। এ সবই সম্ভব হবে ই-র্গভনেন্স এর জন্য বিশেষবাবে উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের কেরামতিতে। সুতরাং এসব তথ্য যোগানের ক্ষেত্র কোন প্রকারের পক্ষপাতিত্ব কিম্বা দীর্ঘসূত্রতার বালাই থাকবে না। কৃত্রিম গোয়েন্দা সফটওয়্যার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যাবতীয় তথ্যপ্ঞ্জু বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেবে ঐ প্রার্থী কতটা ও কিবাবে একজন সফল রাজনীতিক হিসাবে আর্বিভূত হবেন। কোন নির্বাচনী কর্মকর্তা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে থেকেও মুহুতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। শুরু করতে পারবেন বাস্তব নির্বাচনী প্রক্রিয়া। ভোটারদের আর সশরীরে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে হবে না। বাড়িতেই থাকবেন এবং নিশ্চিন্তে ভারচুয়াল পুলিং বুথের মাধ্যমে ভোট দেবেন।

No comments

ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ

ব্যাপ্তি বা ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ হলো : Personal Area Network (PAN) PAN এমন এক ধরনের কম্পিউটার নেটওয়...

Powered by Blogger.